Wait for the page to load...

শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫
২৫ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

নারী ফুটবলারদের অনুশীলনে ফেরার ঘোষণা, কিন্তু বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে

প্রতিবেদক: Jewel Rana

প্রকাশকাল: ০৯ মে, ২০২৫

গত কয়েকদিন দিন ধরে চলা বিদ্রোহের ঘটনায় উত্তপ্ত বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। মেয়েদের অনুশীলনে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কর্তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। একের পর এক মিটিং, তদন্ত কমিটি গঠন এবং শেষ পর্যন্ত একটি সমাধানের আভাস মিলেছে। আজ দুপুরে বাফুফে নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে আলোচনায় বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলার জানান, তারা কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলনে ফিরতে প্রস্তুত। মাহফুজাও পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, ‘মেয়েরা অনুশীলনে ফিরবে।’

প্রথম নজরে মনে হচ্ছে, নারী ফুটবলের এই বিদ্রোহের অবসান ঘটতে চলেছে। তবে মাহফুজার আরেক মন্তব্য নতুন বিতর্কের সূত্রপাত করতে পারে। কোচ বাটলারকে নিয়ে সৃষ্ট অশান্তির জন্য তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন বাফুফের জরুরি কমিটির দিকেই। মাহফুজা আরও বলেছেন, বাটলারের চুক্তি নবায়নের পক্ষে নারী উইং ছিল না।

মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘আমরা বাফুফের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। এই কোচ নিয়োগ না দেওয়ার জন্যও আমরা তাদের বলেছি। মূলত এই কোচ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ইমার্জেন্সি কমিটির মাধ্যমে, যেখানে সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং সিনিয়র সহ-সভাপতিরাও রয়েছেন।’

যদিও বিদ্রোহী ফুটবলাররা নারী উইং প্রধানকে বিদ্রোহ থেকে সরে আসার কথা জানালেও, তারা এখনই অনুশীলনে ফিরতে চায় না। ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচেও তারা অংশ নেবে না। মাহফুজা এ বিষয়ে বলেন, ‘ক্যাম্প ২৪ ফেব্রুয়ারি বন্ধ হয়ে যাবে এবং দল সেদিনই আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। এই সময়ে সিনিয়র মেয়েরা (১৮ বিদ্রোহী ফুটবলার) একটু ছুটি কাটাতে চায়। এটাকে তাদের জন্য একটি বিরতি বলা যেতে পারে। এরপর তারা আবার ক্যাম্পে ফিরে অনুশীলন শুরু করবে।’

এক বিদ্রোহী ফুটবলার, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই অনুশীলনে ফিরব না। আমরা আপাকে (কিরণ) বলেছি, যেহেতু কোচই মহান, তিনি যেন তার দল নিয়ে খেলেন। আমরা তাদের ফলাফল দেখব। পরের বিষয় পরে দেখা যাবে।’

মেয়েদের এই ফেরা দেশের নারী ফুটবলের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক হবে, তা এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, কোচ বাটলারকে নিয়ে এখনও মেয়েদের মনে ক্ষোভ রয়ে গেছে। এক বিদ্রোহী ফুটবলার বলেন, ‘আমরা এখনই অনুশীলনে ফিরব না। কোচ যেন তার দল নিয়ে খেলেন, আমরা তাদের ফলাফল দেখব।’

কোচ বাটলার এবং নারী উইং প্রধান মাহফুজার মধ্যে দূরত্বও স্পষ্ট হয়েছে। বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে মাহফুজা ফুটবলারদের সঙ্গে আলোচনা করলেও, কোচের সঙ্গে এই আলোচনার ফলাফল শেয়ার করেননি। সূত্রমতে, বাটলার এই বিষয়টি সহজভাবে নেননি। মেয়েরা যখনই দলে ফিরুক, বাটলার তাদের কীভাবে স্বাগত জানাবেন, তা এখনও অনিশ্চিত।

বাটলার এবং সিনিয়র ফুটবলারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব গত অক্টোবরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময় থেকেই চলছে। যদিও তখন মেয়েদের পারফরম্যান্সে কোনো বিতর্ক তৈরি হয়নি। নেপালকে হারিয়ে তারা সাফ শিরোপা ধরে রেখেছিল। গত মাসে বাটলারের চুক্তি দুই বছর বাড়ানোর পরই আবার বিতর্ক শুরু হয়। নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার পর কোচ টিম মিটিং ডাকলেও, ক্যাম্পে থাকা ১৮ ফুটবলার তাতে অংশ নেননি।

গত ৩০ জানুয়ারি, সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে বিদ্রোহী ফুটবলাররা বাফুফে ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে তিন পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা জানান, বাটলারকে কোচ হিসেবে রাখা হলে তারা অনুশীলনে যোগ দেবেন না এবং সবাই একযোগে অবসরের হুমকি দেন। এরপর বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

সর্বশেষ সম্পাদনা: শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫ ০৬:৫৫ অপরাহ্ন