Wait for the page to load...

সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
২৮ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

ফরয নামায শেষে পঠিতব্য যিকির-আযকার ও দোয়া-দরুদ

প্রতিবেদক: Jewel Rana

প্রকাশকাল: ১২ মে, ২০২৫

নামায ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। নামায শুধু আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কই সুদৃঢ় করে না, বরং এটি আত্মিক শান্তি ও প্রশান্তিরও উৎস। ফরয নামায শেষে কিছু যিকির-আযকার ও দোয়া-দরুদ পাঠের মাধ্যমে নামাযের পরিপূর্ণতা অর্জন করা যায়। এগুলো নবীজি (সা.)-এর সুন্নত এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শ। নিম্নে ফরয নামায শেষে পঠিতব্য কিছু যিকির, আযকার ও দোয়া-দরুদ আলোচনা করা হলো:

তাসবীহ পাঠ

নামায শেষে নবীজি (সা.) নিয়মিত তাসবীহ পাঠ করতেন। এটি একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল।

সুবহানাল্লাহ (৩৩ বার)

আলহামদুলিল্লাহ (৩৩ বার)

আল্লাহু আকবার (৩৩ বার)

এরপর পূর্ণ একশত বার পূরণের জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির পাঠ করা। এই যিকিরের মাধ্যমে নামাযের পরিপূর্ণতা অর্জিত হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

আয়াতুল কুরসী পাঠ

নামায শেষে আয়াতুল কুরসী (সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৫) পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। নবীজি (সা.) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো বাধা থাকবে না।”

এই আয়াত পাঠে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তি মেলে এবং আল্লাহর হেফাজত লাভ করা যায়।

সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ
ফরয নামাযের পর সূরা ইখলাস (৩ বার), সূরা ফালাক (১ বার) এবং সূরা নাস (১ বার) পাঠ করা সুন্নত। এই সূরাগুলো পাঠ করলে আল্লাহর রহমত ও হেফাজত লাভ করা যায় এবং যাবতীয় অনিষ্ট থেকে মুক্তি মেলে।

দরুদ শরীফ পাঠ

নামায শেষে দরুদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। দরুদ পাঠে নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পায় এবং আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।

দরুদ ইব্রাহীম:

“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আালি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আালি ইব্রাহীমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আালি মুহাম্মাদিন, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আালি ইব্রাহীমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।”

৫. দোয়া মাসুরা পাঠ

নামায শেষে নবীজি (সা.)-এর শেখানো কিছু দোয়া পাঠ করা সুন্নত। যেমন:

দোয়া:

“আল্লাহুম্মা আন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।”
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি, আর তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না। তাই তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে রহম করো। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।)

আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ

নামায শেষে আস্তাগফিরুল্লাহ (অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি) পাঠ করা উচিত। এটি একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যিকির। এটি পাঠে গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।

দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া

নামায শেষে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া করা উচিত। যেমন:

দোয়া:

“রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান নার।”
(অর্থ: হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করো এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।)

ফরয নামায শেষে যিকির-আযকার ও দোয়া-দরুদ পাঠ করা নবীজি (সা.)-এর সুন্নত এবং ইবাদতের পরিপূর্ণতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আমলগুলো আমাদের আত্মিক উন্নতি সাধন করে, আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত করে। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নামায শেষে নিয়মিতভাবে এই আমলগুলো করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন।

সর্বশেষ সম্পাদনা: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫ ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন