Wait for the page to load...

সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
২৮ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স ব্যবসা ও এর ভবিষ্যৎ

প্রতিবেদক: Jewel Rana

প্রকাশকাল: ১২ মে, ২০২৫

বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করছে, এবং বাংলাদেশও এই ধারা থেকে পিছিয়ে নেই। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে ই-কমার্স শিল্প গত কয়েক বছরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে অনলাইন শপিং আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। তবে, এ খাতে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত গত এক দশকে দ্রুত বিকশিত হয়েছে। ২০১৫ সালের আগে যেখানে অনলাইন কেনাকাটার ধারণা তুলনামূলক নতুন ছিল, সেখানে এখন হাজারো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ক্রেতাদের দোরগোড়ায় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—

  • বৃহৎ তরুণ ক্রেতা শ্রেণি: বাংলাদেশে ৫০% মানুষের বয়স ২৫ বছরের নিচে, যা ই-কমার্সের জন্য বড় একটি সুবিধা।
  • ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসার: ২০২৩ সালের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যা ই-কমার্সের বিকাশে সহায়ক।
  • ডিজিটাল পেমেন্টের জনপ্রিয়তা: বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ই-কমার্স লেনদেন সহজ করেছে।

বিভিন্ন জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যেমন Daraz, Pickaboo, AjkerDeal, Rokomari, Othoba ইত্যাদি বর্তমানে দেশের ই-কমার্স বাজারকে এগিয়ে নিচ্ছে।

ই-কমার্স ব্যবসার চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা বিশাল হলেও, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে—

  •  গ্রাহকদের আস্থার অভাব: অনেক ফ্রড ই-কমার্স কোম্পানি (যেমন: ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ) গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করায় ই-কমার্সের প্রতি মানুষের আস্থা কিছুটা কমেছে।
  • ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা সীমিত: এখনো অনেক ক্রেতা ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতিতে কেনাকাটা করেন, যা ই-কমার্সের জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ।
  • ডেলিভারি অবকাঠামোর দুর্বলতা: প্রান্তিক অঞ্চলে এখনো দ্রুত ডেলিভারি সেবা দেওয়া কঠিন।
  • সরকারি নীতির অস্বচ্ছতা: ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল নীতিমালা দরকার, যা এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

ই-কমার্স খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজার ক্রমশ উন্নতি করছে এবং আগামী কয়েক বছরে এটি আরও সমৃদ্ধ হবে। ভবিষ্যতে কিছু সম্ভাবনাময় দিক হলো—

  • কৃষিপণ্য ও গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তি: অনেক কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন।
  • আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্রবেশ: আলীবাবা, আমাজনের মতো বড় প্ল্যাটফর্ম ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও সক্রিয় হতে পারে।
  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ও ডাটা অ্যানালিটিক্স: ভবিষ্যতে ই-কমার্স ব্যবসায় কাস্টমার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে।
  • স্বাস্থ্য ও এডটেক ই-কমার্স: ওষুধ, চিকিৎসা সেবা ও অনলাইন শিক্ষাক্ষেত্রেও ই-কমার্সের নতুন সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সঠিক নীতিমালা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ খাত আরও বিকশিত হতে পারে। সরকারের সহায়তা, ব্যবসায়ীদের সততা এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ই-কমার্স শিল্প এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। সুতরাং, বাংলাদেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে।

সর্বশেষ সম্পাদনা: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫ ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন