ব্যবসার বরকত নষ্ট করে যেসব বিষয়
ব্যবসা একটি সম্মানজনক পেশা, যা মানুষের জীবন ধারণের অন্যতম মাধ্যম। তবে, শুধু চেষ্টা করলেই ব্যবসায় সফলতা আসে না। কিছু কাজ আছে যা ব্যবসার বরকত নষ্ট করে এবং লোকসানের দিকে ঠেলে দেয়। কুরআন ও হাদিসের আলোকে সেই কাজগুলো সম্পর্কে জেনে, সেগুলো থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
১. মিথ্যা ও ভেজাল: ব্যবসার মূল ভিত্তি হলো সততা। মিথ্যা কথা বলা, ভেজাল পণ্য বিক্রি করা বা ওজনে কম দেওয়া – এগুলো সবই হারাম এবং ব্যবসার বরকত নষ্ট করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে, সে আমার উম্মত নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)। ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বিক্রি করে সাময়িক লাভবান হওয়া গেলেও, আখেরে এর ফল অত্যন্ত খারাপ হয়।
২. সুদ: সুদ একটি ভয়াবহ গুনাহ। ইসলামে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৬)। সুদের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করলে বরকত তো দূরের কথা, বরং ধ্বংস অনিবার্য।
৩. প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি: ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (মুসলিম)। ক্রেতাদের ঠকিয়ে বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসা করলে, আল্লাহর সাহায্য ও বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
৪. পণ্যের দোষ গোপন করা: পণ্যের কোনো ত্রুটি থাকলে তা অবশ্যই ক্রেতাকে জানাতে হবে। দোষ গোপন করে পণ্য বিক্রি করলে তা প্রতারণার শামিল এবং এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হালাল নয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি পণ্যের দোষ গোপন করে বিক্রি করে, সে আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়।” (মুসলিম)।
৫. সময় নষ্ট করা ও অবহেলা: ব্যবসার জন্য সময়ের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। সময় নষ্ট করা, কাজে অবহেলা করা বা অলসতা করা ব্যবসার উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে, পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে ব্যবসায় উন্নতি সম্ভব।
৬. ইবাদত থেকে দূরে থাকা: ব্যবসার ব্যস্ততার কারণে নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত থেকে দূরে থাকা উচিত নয়। বরং, ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে, ব্যবসা পরিচালনা করলে তাতে বরকত আসে।
৭. দান ও সদকা না করা: দান ও সদকা করলে আল্লাহ তা’আলা ব্যবসার সম্পদ বৃদ্ধি করেন। গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করলে মনের প্রশান্তি আসে এবং ব্যবসায় বরকত হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা যা কিছু দান কর, আল্লাহ তার প্রতিদান দেবেন।” (সূরা সাবা, আয়াত ৩৯)।
৮. অতিরিক্ত লোভ ও কৃপণতা: অতিরিক্ত লোভ ও কৃপণতা ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর। অল্প লাভে সন্তুষ্ট থাকলে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে ব্যবসায় উন্নতি হয়। অপরের হক নষ্ট করা বা নিজের লাভের জন্য সবকিছু করতে চাওয়া – এগুলো ব্যবসার জন্য অশুভ লক্ষণ।
৯. হিংসা ও বিদ্বেষ: হিংসা ও বিদ্বেষ মানুষের মনকে কলুষিত করে এবং ব্যবসার উন্নতিতে বাধা দেয়। ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।
১০. অসৎ পথে আয়: অসৎ পথে আয় করা যেমন – চুরি, ডাকাতি, ঘুষ ইত্যাদি – সম্পূর্ণ হারাম এবং এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে ব্যবসা করলে তাতে বরকত থাকে না। হালাল পথে ব্যবসা পরিচালনা করাই ইসলামের শিক্ষা।
১১. অন্যায়ের সাথে আপোষ: ব্যবসা ক্ষেত্রে অনেক সময় অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে হয়। কিন্তু, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে বা মিথ্যার সাথে হাত মেলালে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায় না। ন্যায়ের পথে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করাই প্রকৃত মুমিনের কাজ।
এই কাজগুলো পরিহার করে, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ব্যবসা পরিচালনা করলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ব্যবসায় বরকত দান করবেন।
সর্বশেষ সম্পাদনা: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫ ০৮:১০ পূর্বাহ্ন