Wait for the page to load...

মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫
১১ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)

লেবাননে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারে বিলম্ব, জাতিসংঘের কড়া প্রতিক্রিয়া

প্রতিবেদক: Jewel Rana

প্রকাশকাল: ২৬ আগস্ট, ২০২৫

জাতিসংঘের লেবাননবিষয়ক দূত এবং শান্তিরক্ষা বাহিনী মঙ্গলবার জানিয়েছে, ইসরাইলের দেরিতে সেনা প্রত্যাহার জাতিসংঘের সেই প্রস্তাব লঙ্ঘন করছে, যা ২০০৬ সালের হিজবুল্লাহ-ইসরাইল যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির ভিত্তি তৈরি করেছিল।

এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “আজ ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রত্যাহার এবং লেবাননের সেনাবাহিনীর দক্ষিণ লেবাননে অবস্থান গ্রহণের সময়সীমার শেষ দিন, এই প্রক্রিয়ার আরেকটি বিলম্ব আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না, বিশেষ করে কারণ এটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ (২০০৬) নম্বর প্রস্তাবের লঙ্ঘন।”

মঙ্গলবার, ইসরাইলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের প্রায় সব এলাকা থেকে সরে যায়, তবে পাঁচটি কৌশলগত অবস্থানে রয়ে গেছে। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সীমান্ত গ্রামগুলোতে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেছেন।

কফার কিলায় ফিরে আসা আলা আল-জেইন বলেন, “পুরো গ্রামটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”

অনেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ি, কৃষিজমি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফিরে পেয়েছেন। দেড় বছরের সংঘর্ষের মধ্যে দুই মাসের পুরোদস্তুর যুদ্ধের পর ২৭ নভেম্বরের যুদ্ধবিরতিতে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

ইসরাইল যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী সেনা প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্তে ঘোষণা করেছিল, তারা সীমান্তের কাছে পাঁচটি কৌশলগত অবস্থানে সেনা রাখবে। মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ এই অবস্থান নিশ্চিত করে বলেন, হিজবুল্লাহর যেকোনো লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে লেবানন সরকার বলেছে, ইসরাইলের যে কোনো সেনা উপস্থিতি তাদের ভূমিতে দখলদারিত্ব হিসেবে গণ্য হবে। দেশটি এই বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে অভিযোগ জানাবে এবং লেবাননের সেনাবাহিনী সীমান্তের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে।

লেবাননের সেনাবাহিনী সোমবার রাত থেকে ১১টি সীমান্ত গ্রাম ও অন্যান্য এলাকায় মোতায়েন হয়েছে, যেসব এলাকা থেকে ইসরাইলি বাহিনী সরে গেছে।

জাতিসংঘ দূত জ্যানিন হেনিস-প্ল্যাসচার্ট এবং ইউনিফিল শান্তিরক্ষা বাহিনী এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “ইসরাইলের প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বিলম্ব কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না এবং এটি ২০০৬ সালের নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাবের লঙ্ঘন।”

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিসের (এফডিডি) জ্যেষ্ঠ ফেলো এবং সাবেক ইসরাইলি সেনা মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেন, “একবার লেবাননের সেনাবাহিনী পুরোপুরি দক্ষিণে মোতায়েন হলে, ইসরাইলি বাহিনীও সম্ভবত তাদের প্রত্যাহার সম্পন্ন করবে, যদি হিজবুল্লাহ চুক্তির শর্ত মেনে চলে।”

লেবাননে পুনর্গঠনের ব্যয় ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে বলে জাতিসংঘের অনুমান। এখনও ১ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়েছে।

অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে স্বজনদের মরদেহ খুঁজতে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে সামিরা জুমা নামে এক নারীও রয়েছেন, যিনি পাঁচ মাস আগে কফার কিলায় নিহত হওয়া তার হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ভাইয়ের মরদেহ খুঁজতে এসেছেন।

সামিরা বলেন, “আমরা জানি তারা শহীদ হয়েছেন। আমি এসেছি আমার ভাইকে দেখতে এবং সেই ভূমি স্পর্শ করতে, যেখানে সে ও তার সঙ্গীরা লড়াই করেছে।”

এদিকে, লেবাননের দক্ষিণের টাইবে ও ওদাইসেহ গ্রামের প্রবেশপথে সেনা চৌকির সামনে কয়েক ডজন গাড়ি অপেক্ষা করছে, যাতে করে মানুষ তাদের গ্রামে ফিরে যেতে পারে। স্থানীয় নারীরা হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ছবি বহন করছিলেন এবং অনেকে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর হলুদ পতাকা উঁচু করে ধরে রেখেছিলেন।

হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিগুলো, বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্ব লেবানন এবং বৈরুতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে। গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে হামাসকে সমর্থন দিতে গিয়ে হিজবুল্লাহ এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি অনুযায়ী, ইসরাইলি বাহিনী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে সরে যাবে, যা ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।

এই চুক্তির আওতায় হিজবুল্লাহকে লিটানি নদীর উত্তরে (সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে) সরে যেতে হবে এবং সেখানে থাকা তাদের সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করতে হবে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত সংঘর্ষে লেবাননে ৪,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরাইলের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সীমান্তের ইসরাইলি অংশে ৭৮ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই সেনা সদস্য। এছাড়া লেবাননে ইসরাইলি স্থল অভিযানে ৫৬ জন সৈন্য নিহত হয়েছে।

সর্বশেষ সম্পাদনা: মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ ১০:৫৩ অপরাহ্ন